উচ্ছন্নে যাক দেশ
উচ্ছন্নে যাক দেশ !! এইরকম কথা শুনে আপনার লিচ্চয় হেব্বী রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাকে, শুধু আমাকে কেন, আমার মরা বাপ ঠাকুদ্দাকে অবধি পেটাতে ইচ্ছে করছে। হ্যাঁ, আপনি একজন পরম দেশভক্ত, দেশের নামে আপনি কটুক্তি শুনতেই পারেন না।
কেউ কেউ দেশ বলতে নিজের জন্মভিটেকে বোঝে। কলকাতায় নিজের বাড়িতে বসে আমি অনেককে বলতে শুনেছি – আমাদের দেশ মেদিনীপুর, আমাদের দেশ আসাম, আমাদের দেশ কোচবিহার ইত্যাদি। এই বাংলার অনেকেই এখনও বাংলাদেশকেই নিজের দেশ বলে। বিয়ের সময় তাদের আবার পূর্ববঙ্গ বংশীয় ছেলে বা মেয়েই চাই। অনেকে আবার দেশ বলতে শুধু নিজের দেশটাকেই বোঝেন, অন্য দেশ তো দেশ নয়, তাদের কাছে বিদ্বেষ।
যাই হোক, আমি দেশ বলতে বুঝি মানুষ। দেশের পাহাড়, নদী, গ্রাম, রাস্তাঘাট, জঙ্গল ইত্যাদি। দেশের পশু, পাখি, ফল ইত্যাদি। মানুষের কথা বাদই দিলাম। এই দেশের পাহাড়, নদী, জঙ্গল কি ভালো আছে ?? একদমই না। মাতাল বাবা যেমন তার যুবতী মেয়ের বিনিময়ে করে মদের বোতল কেনে, আমাদের দেশের নেতা মন্ত্রীরা বহুদিন ধরেই একটা একটা করে এরকম পাহাড়, নদী, জঙ্গল বেঁচে দিয়েছে পুঁজিপতিদের কাছে। তারা সেখানে ফ্যাক্টরী বানিয়ে কালো ধোওয়া বার করেছে, রিসর্ট বানিয়ে ফুর্তি করেছে, জঙ্গল কেটে বাগান বাড়ি বানিয়ে পিকনিক করেছে।
প্রথমে দেশের সব নদীর জল দুষিত করে দাও। তারপর সেই দেশে জল বিশুদ্ধ করার ফ্যাক্টরী করো। ফ্যাক্টরীর দুষিত জল নদীতে, পুকুরে ফেলে সেগুলিকে আরও দুষিত করে দাও। তারপর ফ্যাক্টরীতে তৈরী জল বোতলে ভরে মানুষের কাছে বিক্রি করো। যে দেশে এরকমটা হয়, সেই দেশ চুলোয় যাক।
আমার বাবা জল খেতে খুব পছন্দ করতো। সারাদিন অনেক জল খেত। অনেকটা জল একসাথে খাওয়ার পর তৃপ্তির আহ করার পর বলতো ‘বিনে পয়সার জল, মন ভরে খাও’। মরার আগে বাবাকে জল কিনে খেতে হত। পয়সা যাতে বেশী খরচ না হয়, জল মেপে খেতে হতো।
চাষী আলু ফলায়। নামমাত্র দামে সেই আলু কিনে, তার সাথে একটু হাওয়া মিশিয়ে প্যাকেটে ভরে পাঁচশো টাকা কিলো দরে দোকানে দোকানে লাল নীল প্যাকেটে বিক্রি করার নাম হলো প্রগতি, উন্নয়ন। যেসব দেশে এমনটা হয়, তার উচ্ছন্নে যাওয়াই উচিত।
গালে পতাকা এঁকে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেই দেশপ্রেম হয় না। অথবা ক্রিকেটে ভারতের হয়ে গলাবাজি করলেও নয়। দেশকে ভালোবাসলে রাস্তায় থুতু ফেলা বন্ধ করুন। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলুন। রাস্তাঘাটে বাসে ট্রেনে সব সময় শেয়ালের মত খ্যাঁক খ্যাঁক করবেন না, ভদ্রভাবে কথা বলুন, না পারলে চুপ থাকুন। পশুপাখিদের সাথে অমানুষের মত ব্যবহার করে মনুষ্যজাতির বদনাম করবেন না। ওদের সহযোগিতা করুন, ভালোবাসুন। সরকারী অফিসে নিজের কাজটা ফাঁকি দিয়ে ফেসবুক করবেন না, পাশের টেবিলের সাথে গল্প করবেন না। এসব করুন, দেখবেন দেশকে না বেসেও দেশের উন্নতি করতে পারছেন।
তবে সব কিছুর আগে প্রকৃতিকে ভালোবাসুন। ফুলগাছের সাথে সেলফি তোলাকে ভালোবাসা বলে না। ফুল গাছকে জন্ম দিয়ে, তাকে বড় করে সেখানে ফুল ফোটালে তাকে ভালোবাসা বলে। সেটা করুন।
লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন। সাইটে আরো লেখা আছে ঘুরে ফিরে দেখুন। নতুন লেখা পড়তে মাঝে মাঝে ঢুঁ মারুন। ধন্যবাদ।