প্রিয় মানুষের মৃত্যু হয় – কাছের মানুষ মানতে পারে না।
সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে মারা গেল এক বন্ধু। খবর শুনে অন্য বন্ধুর বিশ্বাস হতে চায় না। ধুর তোরা ইয়ার্কি মারছিস !! বন্ধু মারা গেছে – এ হতে পারে না !! রোজ বিকেল হলেই বাড়ির নিচ থেকে আওয়াজ দিত ফুটবল খেলতে যাওয়ার জন্য। এখনও বিকেল হলে বাড়ির নিচ থেকে জোরে কেউ ডাকলে মুহুর্তের জন্য মন বলে ওঠে ‘ঐ তো !!’
পথে ঘাটে গাড়ি চাপা পড়ে রোজ মরে যায় কত শত শিশু !! মায়েরা শুধু চেয়ে থাকে। মৃত সন্তান ঘুমিয়ে আছে চোখের সামনে। মায়ের মন মানতে চায় না। এই বুঝি বাচ্চাটা জেগে উঠে তার মা-কে খুঁজবে। সন্তান কেন সাড়া দিচ্ছে না !! মা অভিমান করে ঘরে খিল দিয়ে আলনা থেকে নিয়ে সন্তানের জামায় হাত বোলাচ্ছে। সন্তান মারা গেছে – ব্রেনে খবর গেছে, হৃদয়ে যাচ্ছে না। মা-কে একা ঘরে রেখেই সকলে মিলে মৃত সন্তানকে নিয়ে চলে গেল শশ্মানের উদ্দেশ্যে। মা-কে ছাড়া প্রথমবার সে কোথাও যাচ্ছে।
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীরা একা হয়ে যায়। সন্ধ্যাবেলায় কারখানা থেকে ফিরে লোকটা স্ত্রী-র নাম ধরে ডাকতো। এক ঘটি জল চাইতো। পা না ধুয়ে ঘরে ঢুকতো না। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই জীবিত স্ত্রী মৃত স্বামীর ডাক শুনতে পায়। এখনও।
কাছের মানুষ মারা গেলে মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। এক্ষুনি ঘুম ভেঙে যাবে, দেখবো সব ঠিকই তো আছে। কিন্তু ঘুম ভাঙে না।
পথের ধারের ভিখারিটাকে রোজ দেখতে পেতেন, একদিন থেকে আর তাকে দেখা গেল না। সকাল বেলায় ফুল দিতে আসতো যে মহিলা, একদিন থেকে সে আসা বন্ধ করে দিল।
বেঁটে মত লোকটা এ পাড়া দিয়ে হেঁটে যায়। সবাই জানে উনি অমুক স্কুলের টীচার। কোনোদিন কারো সাথেই কোনো কথা টথা হয় না। অনেকদিন পর চায়ের দোকানের আড্ডায় কেউ বলে ওঠে ওই লোকটাকে তো এখন আর দেখি না !!
মেনে নিতে না পারা এই লোকগুলোর পিছনে একটা শক্তলোকের খুব দরকার, যে দরজা ধাক্কা দিয়ে, শরীরে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে, চড়-চাপড় মেরে সেই মা-কে ঘরের বাইরে এনে বলবে ‘ওরে তোর ছেলে আর বেঁচে নেই, ও চলে যাচ্ছে, শেষ দেখা দেখে নে।’
একটা শক্ত মানুষ যে স্মৃতির ভারে ডুবে থাকা সেই জীবিত বন্ধুকে ফোন করে করে ফুটবল মাঠে আসার জন্য জ্বালিয়ে মারবে।
———————————————————-
শুধু প্রিয় মানুষ মরে না। প্রিয় সম্পর্কও মরে যায়। মেনে নেওয়া যায় না। মনে হয় স্বপ্ন। ঘুম ভেঙে যাবে। আবার সব আগের মত হয়ে যাবে। একটা শক্ত লোক এদের জীবনেও জুটুক।