বন্দি জীবন
One Way Life আমাদের। Reverse নেওয়া মানা। নেই Control + Z. যে সময় এই মাত্র চলে গেল সে আর ফিরবে না কোনদিন। ট্রেনের জানলায় বসে হাত নাড়ানো ছাড়া আর কিই বা করতে পারি আমরা।
অসহায় অদ্ভুত এক টাইম স্পেসের মধ্যে বন্দি জীবন। এটাই সময়, যা করতে হবে এখনই। প্রতিটা মুহূর্ত পার হয়ে যাচ্ছে ঘড়ির টিকটিক শব্দে। পাহাড় ডাকছে, পাহাড়ে যান। সাগর ডাকছে সাগরে যান। বাসের উল্টো দিকের সিটে সবুজ সালোয়ার পরে বসা মেয়েটিকে ভালো লাগছে তো কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেই দিন ভালো লাগছে। পরের স্টপেজেই নেমে যাবে সে, আর তাকে ফিরে পাবেন না। কোনদিন না।
এই সময়ের জাল ভেঙে আপনি আর কখনই ফিরতে পারবেন না পুরোনো কোনো সময়ে। মাঝবয়সে এসে স্কুলের দেওয়াল দেখে আপনি থমকে দাঁড়াবেন। কলেজের সামনের কৃষ্ণচূড়ার নিচে দাঁড়ানো বিকেলগুলো আপনার মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলবে।
প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে যে মানুষকে ছেড়ে আপনি চলে এসেছিলেন, বহু বছর পর তার কথা ভেবে কান্না পাবে। মনে হবে যদি সব ঠিক হয়ে যেত। ড্রয়ার থেকে তুলো মলম হাতে নিয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন না সেই সময়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে। কোন কথা, কোন শব্দ, কোন আচরণের কেমিকাল রি-অ্যাকশনে তার মনের সব ভালোবাসা ঘৃণায় ট্রান্সফার হয়েছে আপনি চাইলেও মনে করতে পারবেন না। সব বিক্রিয়া চোখে দেখা যায় না। কিছু মানুষকে চোখ বন্ধ করে দেখতে হয়।
যে মানুষটাকে এই মাত্র আগুনে পুড়িয়ে এলেন সে আর নেই। গাছ থেকে যে পাতাটা এইমাত্র পড়ে গেল, সে আর নেই। কিন্তু আপনি এখনও আছেন। বেঁচে আছেন – এটাই সব থেকে বড় পাওয়া। এখনও গ্রাভিটি আপনাকে টেনে রেখেছে। চাইলেই আপনি সব পাবেন না। কিন্তু এই যে এখনও চাইতে পারছেন এটাই তো শক্তি। এটাই সম্পদ।
জীবন চক্রান্ত করছে আমাদের সাথে। রোজ ঘুম থেকে উঠে সেই একই রুটিন। তিনদিন দীঘা ঘুরে এসে সেলফি তুলে ‘ইয়ে হে জিন্দেগী’ পোস্ট করাটাও সেই কুচক্রান্তের অংশ। আপনার লাইফ তিন দিনের নয়। আপনার লাইফের প্রতিটা মুহূর্ত আপনার। ফিউচার প্লানিং করে মুহুর্তের বারোটা বাজাবেন না। জীবন উপন্যাসের মত হলেও মুহুর্ত কিন্তু কবিতার মত।
গভীর রাতে মদের গ্লাস হাতে অঞ্জন দত্ত শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে আহা গীটার বাজানো শেখা হলো না। কতদিন থিয়েটার দেখিনি। কতদিন একটা সিনেমা বানাই নি। একটা কবিতা লিখিনি কতদিন। কতদিন হয়ে গেল তার চোখের দিকে তাকাই নি। যে শরীরে ছিল অবাধ আনাগোনা সেখানে আজ সময় প্রহরীর পাহারা। সবার কলার টিউন এক নয়। এক সুরে বাজে না সবার মনের তার। আপনার আজ মনে হচ্ছে সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করি চলো। তার মনে নাও হতে পারে। সে এক অন্য নতুন পথে পাড়ি দিয়েছে ততদিনে। বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছে বন্ধু। পথে পথে কাটাকুটি হয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন কত পথ। হারিয়েও যাচ্ছে কত। আপনার পথ কি আপনি খুঁজে পেয়েছেন ?? অথবা সরু কোনো গলি ?? কোনো শান্ত নদী তীর ??
আপনি পান নি বলেই আঙ্গুর ফল টক ছিল না। সব পেলে জীবন নষ্ট হয় না, সমৃদ্ধ হয়। কারণ জীবন একটাই। মালদ্বীপে গিয়ে সমুদ্রের ধারে সময় কাটানোর পয়সা নেই পকেটে কিন্তু কোনোদিন ফুটপাতে রাত কাটিয়েছেন ?? কোনোদিনও আপনি পেরেছেন অচেনা কোনো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে লাস্ট ট্রেনে হারিয়ে যেতে ?? গড়িয়াহাটের মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে একটা গভীর চুমু ?? সব ইচ্ছেপূরণে পয়সা লাগে না। সব ইচ্ছে সবার হয় না। আপনার ইচ্ছেটা এখনও বেঁচে আছে তো ?? আপনি সেই পথেই হাঁটছেন তো ?? পথটাই মজার। পৌঁছে গেলেই খেলা শেষ। তখন বিশ্রাম। টার্গেট পয়েন্ট রিচ করার আগে বেঁচে নিন এই জীবন। তাড়া কিসের। না হয় কিছু জনের পরে পৌঁছবেন, না হয় পৌঁছতে পারলেন না, কিন্তু দৌঁড় থামাবেন না। ইচ্ছে হলে পথ বদলে নিন, সঙ্গী বদলে নিন, সাজ বদলে নিন কিন্তু চলা যেন না থামে।
শহরের বুক চিড়ে চলা ট্রেনের জানলায় হাওয়া ভেসে আসে না জানি কোনো হাইরাইজের ফাঁক দিয়ে। জেলের মধ্যে বসে থাকা ভীর-জারার শাহরুখ মুখ তুলে চায়। তার জীবনে বিষাদ হয়ে আসে স্মৃতি। আপনি অপেক্ষাও করতে পারেন, অথবা এগিয়েও যেতে পারেন। ভালোবাসার দিকে। মৃত্যুর দিকে। জীবন একটা জেলখানা। জেলটাকে উপভোগ্য করে তুলুন।
জীবন চক্রান্ত করছে, আপনিও একটা সুন্দর কাট করে তাকে গোল দিন। আড়াই চালের ঘোড়া আপনার কাছেও কি নেই ?? খুঁজে দেখুন। খাঁচার বাইরে চাবি নিয়ে হাত বাড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে নেই তো ?? আপনিই হয়ত চিনতে পারছেন না। খাঁচাটাকেই ভালোবেসে ফেলেন নি তো ?? গল্পের শেষে আপনি জিততে পারেন, হারতেও পারেন। কিন্তু আপনার লাইফের গল্পটাকে ম্যাড়মেড়ে করবেন না প্লিজ। শোলের অমিতাভের মত গুলি খেয়ে মরতে মরতেও হাততালিটা ছিনিয়ে নিন। ধোনির মত লাস্ট বলে সিক্স মারুন।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখবেন না শুধু। দুটো পা একসাথে জলে ভেজান। বালির উপর হাঁটুন। পায়ের ছাপ ফেলুন। পরবর্তী ঢেউ এসে মুছে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ রেখে দিন আপনার নামটাও। যা করছেন বুক ঠুকে করুন। জীবনটা আপনার, অন্য কারো বাবার না। লোকেরা বলবে, লোকেরা হাসবে কারণ লোকেরা সেটা পারবে না। দুহাতে বিয়ারের গ্লাস নিয়ে আকাশের দিকে তুলে বলুন – ফাক জিন্দেগী লাভ জিন্দেগী। পার্টি করুন, পলিটিক্স নয়।