সামাজিক

এতদিন ছাদেই ছিল আনাগোনা, এবার টাওয়ার বসছে চাঁদে। ভোডাফোনের নতুন প্রোজেক্ট।

লোকনাথ বাবা বলে গেছেন রণে বনে জলে জঙ্গলে, ভোডাফোন সেখান থেকেই কি অনুপ্রাণিত !! শুনতে নিছক মজার হলেও ঘটনাটি যেন সেরকমই। মনে আছে ভোডাফোনের সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপন যেখানে একটি পাগ (বিশেষ প্রজাতীর কুকুর) তার মনিবকে একদম কাছছাড়া করছে না, মনিব যেখানেই যাচ্ছে, সঙ্গে যাচ্ছে তার ছোট্ট পাগ ছানা। বিগত প্রায় এক দশক ধরে এই বিজ্ঞাপন আমরা দেখছি, যাথে জ্বল জ্বল করে লেখা – আপনি যেখানেই যাবেন, আমাদের নেটওয়ার্ক আপনাকে ফলো করবে।

এই প্রতিশ্রুতিকে আরো বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ভোডাফোন। যেখানে জিও নেটওয়ার্ক এসে যাওয়ার পর একের পর এক মোবাইল কোম্পানী নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে দিচ্ছে, সেখানে ভোডাফোন লড়াই তো ছাড়ছেই না, বদলে নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্যে তৈরী করছে।

যে বাক্য দিয়ে শুরু করেছিলাম, রণে বনে জলে জঙ্গলে – এই বাক্যে এবার যোগ হতে চলেছে ‘চাঁদ’। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। এবার যদি ভুল করে আপনি কখনও চাঁদে চলে যান, বা হারিয়ে যান তাহলে চিন্তা নেই। সাথে ভোডাফোনের কানেকশান থাকলে অনায়াসে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। নেটওয়ার্ক খুঁজে না পাওয়ার কোনো চিন্তা নেই।

অক্সিজেন নেই, খাবার নেই, জল নেই তো কি হয়েছে ? নেটওয়ার্ক আছে। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে স্টাটাস দিতে আপনার কোনো অসুবিধাই হবে না। চাঁদের মাটিতে পা রেখে, নীল পৃথিবীকে ব্যকগ্রাউন্ডে রেখে একটা সেলফি আপনাকে দিতেই হবে। তবেই না চন্দ্রাভিযান সার্থক।

তবুও আপনি কি ভেবেছেন ? চাঁদে গিয়ে সেলফি তুলে আপনি বিশালসংখ্যক লাইক আর কয়েক হাজার ফলোয়ার জুটিয়ে নেবেন। সে গুঁড়ে বালি। মহাবিশ্বের অরিজিনাল চাঁদের থেকে পৃথিবীর চাঁদনীদের কদর এখনও বেশী। আপনার পাশের বাড়ির মাধ্যমিক ফেল মামুনি ঘুম থেকে উঠে চোখে পিচুটি নিয়ে একটা জিভ বেঁকিয়ে এমন সেলফি সাঁটাবে যে সেটা নিমেষে ভাইরাল হয়ে যাবে। সেখানে কোথায় লাগে আপনার চাঁদের সেলফি।

বাতেলা ছেড়ে, মূল ঘটনায় আসা যাক। হুম। চাঁদে মোবাইল টাওয়ার বসাচ্ছে ভোডাফোন সংস্থা এবং এই প্রোজেক্টে তাদের হেল্প করছে মোবাইল কোম্পানী নোকিয়া ও গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা অডি। আগামী এক-দু বছরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হবে। দেখুন ভোডাফোন একটি প্রাইভেট কোম্পানী, কোনো প্রাইভেট কোম্পানী যখন হাঁচি দেয়, মনে করবেন সেটাও কোনো ব্যবসায়িক কারণেই। মুনাফাই তার শেষ উদ্দেশ্য। সুতরাং, বিপুল অর্থ খরচ করে, চাঁদে টাওয়ার বসিয়েই তারা ক্ষান্ত দেবে না। শুধু পাথরে নাম খোদাই করেই তারা চুপ করে বসে থাকার পাবলিক না। তাদের বিশাল কিছু প্লানিং আছে নিশ্চয়ই।

চাঁদে এই মুহুর্তে কোনো কাস্টোমার তাদের নেই। সুতরাং দুটো কারণ হতে পারে, হয় চাঁদ থেকে কোনো রকম প্রযুক্তি দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে কোনো সার্ভিস দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। ধরা যাক, এইরকম কোনো অ্যাপ আনা হল, যার মাধ্যমে মানুষ চাঁদের লাইভ ভিডিও দেখতে পারবে বা ঐ গোছের কিছু অথবা কোনো লাইভ গেম। মোদ্দা ব্যাপার, টাওয়ার চাঁদেই বসুক কি ছাদেই মূল টার্গেট কাস্টোমার অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ।

অথবা আরো দুটো ধারণা একেবারেই ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। এক, খুব শীঘ্র মানুষের জন্যে চাঁদে বসতি স্থাপন হতে চলেছে এবং দুই, চাঁদে কোনো উন্নত বা সমগোত্রীয় প্রাণীর সন্ধান মিলেছে যাদের হাতে হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর ভোডাফোন কোম্পানী।
ভাবছেন পাগলের প্রলাপ !! যদি সিনেমার দৃশ্যকে সিরিয়ার দৃশ্য বলে চালিয়ে দেওয়া যায়, সেখানে কোনো সম্ভাবনা নিয়েই খিল্লি করা উচিত নয়। এতদিন চাঁদের বুড়ি চরকা চালাতো, এবার থেকে ইউটিউব চালাবে। চাঁদে রিংটোন হবে ‘চাঁদ কেন আসে না আমার ঘরে …’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *