ছোটবেলার পিচকিরি
ছোটবেলায় আমার একটা পিতলের পিচকিরি ছিল। লাল রঙের হাতল ছিল তার। ওরকম পিচকিরি আমি আজীবনকাল আর কারও হাতে দেখলাম না। DSLR ক্যামেরায় যেমন লেন্স বদলানো যায়। ওটাতেও মুখটা বদলানো যেত। একটা মুখ ছিল – মাঝারি সাইজের নলের মত, খুব মোটা এবং জোরে জল যেত। দ্বিতীয় মুখটা দিয়ে শাওয়ারের মত জল বার হত।
ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে একদম সেরকম। অনেক দূর থেকে অ্যাটাক করতে হলে আমি প্রথম মুখটা লাগাতাম। আর কাউকে একবারে শরীরের অনেকটা ভিজিয়ে দিতে হলে শাওয়ারের মুখটা লাগাতাম। মুখটা খুলে অন্য যায়গায় রাখার দরকার পড়তো না, দুটো মুখ খুলে পজিশনটা ইন্টারচেঞ্জ করে নেওয়া যেত। অনেক সময় নিয়ে নেট ঘেঁটে অবিকল সেরকম একটা পিচকিরির ছবি খুঁজে পেয়েছি। সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
এখনকার পিচকিরি যেমন খারাপ হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয়। সেরকম নয়। এটা খারাপ হলে সারাই করা যেত। আমার ছোটবেলার রঙ খেলার বেশীরভাগটাই এই একটা পিচকিরি দিয়েই কেটেছে। তাই হয়ত এইটার প্রতি এত টান। পেন থেকে প্রেম – এখনকার দিনে সব কিছুই ইউজ এন্ড থ্রো। তাই বোধহয় কোনো কিছুর প্রতি এখন আর কারো মায়া জন্মায় না। আগে রাস্তায় একটা সুন্দর দেখতে পাথর পেলেও কুড়িয়ে এনে বইয়ের তাকে রেখে দিতাম অনেকদিন অবধি। মনে হত কি জানি পরম ধন পেয়েছি।
তারপর একদিন আমিও বড় হয়ে গেলাম, পিচকিরিটাও কোথাও হারিয়ে গেল। এতদিন মনেই ছিল না। আজ ২০২১ এর দোলের দিন হঠাৎ ওটার কথা মনে এলো। চোখের সামনে পিচকিরিটা ছবির মত ভাসছে। সিনেমায় যেমন দেখায়, মনে হয় এই তো টেবিলে রাখা। হাত দিয়ে ধরবো ?? ধরতে গেলে যদি ভ্যানিশ হয়ে যায় !!