কিছু শব্দ, কিছু স্বপ্ন – ভাষা নামের সেই ছোট নদীটা
জায়গাটার নাম পাঁচমাইল। বাসে করে যাচ্ছি। এরপর ধীরে ধিরে আসবে ছয়মাইল, সাতমাইল। আচ্ছা আর কোনো নাম খুঁজে পাওয়া গেল না। খুন্তিমাসির নাম খুন্তি কে রেখেছিল ? সম্ভবত কুন্তি উচ্চারণ করতে না পেরে কিছু গবেট ওকে খুন্তি বানিয়েছে। যেভাবে ‘ভালো লাগে’ কে আলসেমী করে আমরা ‘ভাল্লাগে’ বলে ছেড়ে দিই। এসব শুধু বাংলায় হচ্ছে এরকম কাদুঁনি গাওয়ার কোনো কারণ নেই। বহুদিন ধরেই অ্যাপয়নমেন্ট-কে অ্যাপো বা ফান্টাস্টিক-কে ফান্টা বলে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন পর হয়ত মানুষ হাসবে না। তেরচা করে ঠোঁট বেঁকিয়ে LOL বলবে।
বান্ধবী এসএমএস করেছিল ASAP। তিনদিন চেষ্টা করেও বুঝতে পারিনি, শেষ অবধি গুগল ঘেটে জানা গেল ওটার অর্থ ‘যত শীঘ্র সম্ভব’। যাচ্ছেতাই এবং যা ইচ্ছে তাই দুটো কি একই অর্থ বহন করে? কি জানি। গত দু-এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় ধরে লক্ষ্য করছি খোলা, দেখা, ধরা, বার করা, লাগা, পিছনে, নীচে ইত্যাদি শব্দগুলো ক্রমশ অশ্লীলতার দিকে চলে যাচ্ছে। বাঙালী এখন T-Shirt পরে, গেঞ্জী কাকে বলে ? এখানে প্রেমকে লাইন বলা হয়, প্রেমিকাকে মাল। ধারণা আছে ভালো বাইক থাকলে মাল তোলা এখন খুব সহজ।
ফর্সা মেয়েটার নাম কালী কে রেখেছিল ? আমার থেকে ৩ বছরের বড়। ১৫তেই বিয়ে করে নিল!! ইস্কুলে যেতে আসতে আড়চোখে তাকিয়ে থাকত। একবার পুজোতে এসেছিল পাড়ায়। এখন তার বয়স ৩০, তার মেয়ের বয়স ১৫। আমার তখন অদ্ভুত অবস্থা, মা মেয়ে দুজনেই একই সাথে আমাকে মেপে যাচ্ছে। ‘মাপা’ – এর কি মানে ছিল, কিই বা হল !!!
আমি খুব বেশি নদী দেখিনি। গঙ্গা, হুগলী, ইছামতী, ময়ূঁরাক্ষী, দামোদর, মাতলা, ভাগিরথী, উস্রী ইত্যাদি আর দু-একটা, নাম মনে পড়ছে না এখন। সব ভরা নদী। ভয় লাগিয়ে দেয়। একটা ছোট নদী, দেওঘরে তপোবন পাহাড়ে যেতে পথে পড়েছিল। নদী বলতে ঠিক যেমন ভাবি সেরকম নয়। স্রোত আছে কিন্তু বিপজ্জনক নয়, জলে আঙ্গুল রাখলে তীরের মত ধারা বয়ে যায়। হাঁটু অবধি প্যান্ট গুটিয়ে এপার থেকে ওপারে চলে যাওয়া যায়।
সকলেই জানে ভাষা হল নদীর মত, যেদিকে ঢাল পায় বয়ে যায়। এক নদী গিয়ে পড়ে আর কোনো নদীতে। এই নদীতে এসে মেশে অন্য কোনো নদী। অথচ নদীর ভাষা পালটায় না। নদীর শব্দেরাও একই থাকে। কুলু কুলু, ছলাৎ ছলাৎ। একদিন সেই ছোট নদীটার কাছে ফিরে যাব আবার। আঙ্গুল রাখব আবার তার স্রোতে। জানি না, সেখানে তাকে পাব কি না।