সামাজিক

২৫শে বৈশাখ অথবা ২২শে শ্রাবণ অথবা অশাম শালা অশাম শালা অশাম শালা

রবীন্দ্রনাথকে বোঝা বড় কঠিন। বাঃ কি দারুণ একখানা লাইন। কোনো টপ লেভেলের চ্যানেলে সাদা পায়জামা পরে সন্ধ্যেবেলার আসরে লাইনটা নির্দ্বিধায় ঝেড়ে দিয়ে কামিয়ে আসা গোঁফে একটু তা দিয়ে দিলাম। ওরে হাঁদারামা শুধু রবীন্দ্রনাথকে নয়, নবান্নের মমতা, পিকুর দীপিকা এমনকি পাঁচমাথার পাঁচুগোপালকে বোঝাও চাট্টিখানি কথা নয়।

‘তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো ওগো ঘুম ভাঙানিয়া’ … লাইনটা বুঝলেন তো কোনো প্রেমিকা বা প্রেয়সীকে নিয়ে নয়, ওটা আসলে রাতের বেলায় শান্তিনিকেতনের কোনো এক ঘরে বৃষ্টির সময় চাল ফুটো হয়ে জল পড়ছিল, সেই আনন্দে লেখা। তোমার মাথা !! কবি তোমায় এস এম এস পাঠিয়েছিল ?? কবির মনে কি চলছিল তা তুমি কি করে জানলে হে ছোকরা ‘পয়গম্বাট’। তোমার নিজের মনের কথা তুমি জানো ?? ট্রেনের জানলায় বসে দূরে দেখলে কিছু পাঁজি ছেলে কাঁদা মেখে ফুটবল খেলছে। অমনি তুমি নস্টালজিয়ার পাড়ায় খাবি খেয়ে গুমড়ে উঠলে, আহা রে ‘আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে / বাদল গেছে টুটি’ … উহু উহু। আর নিজের ঘরের ছেলে স্কুল থেকে কাঁদা পায়ে বাড়ি ফিরলে সপাটে চড়, বিকেলে টিফিন বন্ধ। হিপোক্রিটের হিপোপটেমাস।

রবি তার বউদির হাত ধরলে বা তার সাথে লুকোচুরি খেললে পরকিয়া হয়ে যায়। আর তুমি শালা ক্রিয়েটিভের শুঁয়োপোকা তাই নিয়ে বই লেখো, সিনেমা বানাও। টিকিট কেটে ১০০ বছর আগের কাল্পনিক পরকিয়া দেখে নিজেকে শ্বান্তনা দাও, রবীন্দ্রনাথ যদি করতে পারে তাহলে আমি কি দোষ করলুম।

‘আমার হিঁয়ার মাঝে লুকিয়েছিলে দেখতে তোমায় পাইনি’। পাবে কি করে, চোখে তোমার ছানি ছিল, নয়তো ন্যাবা ছিল। অথবা গার্নিশ করা ত্বক দেখে তোমার মাথায় ভ্যাবাচ্যাকা ছিল। শুধু মুখেই বলেছিলে ‘ডাগর দু’খানি আঁখি’ / তোমার চোখ তখন রিসেপসনিস্টের ক্লিভেজে মাখামাখি।

‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ুরের মত নাচেরে’, কবিসভা জমিয়ে দিলে খানিক নিলে হাততালি। ওদিকে খিস্তি দাও পৌরসভায়, যদি অফিস ফেরতা জমা জলে ভিজে যায় গোড়ালি। ‘কৃষ্ণকলি কৃষ্ণকলি’ বলে অনাবিল দাঁত কেলিয়েছো আর বিজ্ঞাপন দিয়েছ পাত্রী চাই ফর্সা। কুমারীর মন কেড়েছে ‘রাখালিয়া বাঁশিতে’ কিন্তু হাজ্‌বেন্ড চাই কেঃসঃচাঃ এবং বাইক বিনা হেলমেটে।

‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাঁটে’। রবি, তুমি বহুদিন আগেই মরেছ। তবু তোমায় শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না কেউ। উঠতি ব্যান্ড গীটার নিয়ে তোমার জ্বালিয়ে দিচ্ছে সুর, নয়তো বালি মাফিয়ায় তোলপাড় হয়ে গেছে সমগ্র বোলপুর। তুমি এখন ঝালে ঝোলে অম্বলে সিনেমা সিরিয়ালে। ভালোবাসার চাপে তুমি চিপসে গেলে। বাংলার মা বোনেরা তোমায় রোজ গিলছে সাথে খানিক মুড়ি তেলেভাজা। ভিখিরি বাউল বিড়িতে দু’টান দিয়ে বলে , ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে / আগে তো নিয়ে আন তালা / অশাম শালা অশাম শালা অশাম শালা …

হয়তো এখানেই ‘দাঁড়িয়ে আছো’ ছোট্ট মিনুর হাত ধরে। দেখে নাও ২২শে শ্রাবণ ভীষণ খুশি, ভরে আছে স্পনসরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *