মুভি রিভিউ

Uma (উমা) Bengali Movie Review Point to Point

‘Uma’ Bengali Movie Directed by Srijit Mukherjee. The Film is Based on a Real Incident. Uma has a wish to watch Kolkata Durga Puja, Her father want to make her dream true. He create a fake Durgapuja during March April.

মহাশয় কি ছিল আর কি হইয়াছেন সেটা পাশাপাশি চতুষ্কোণ এবং উমা দেখলেই বুঝতে পারবেন। শুরুতে কিছুদিন ধরে তিনি সমস্ত জায়গায় , কাগজে টিভিতে ফেসবুকে একটাই কথা বলে গেলেন, আমার সেরা ছবির মধ্যে এটাও ঢুকে যাবে। এটা আমার সবথেকে ইমোশোনাল ফিল্ম ইত্যাদি। সেসব শুনে, আমিও আবেগে আপ্লুত। যেভাবে ভোটের আগে নেতারা বলে ‘আচ্ছে দিন আসছে’ আর গবেট পাবলিক হা করে সেই কথা বিশ্বাস করে, আমিও সেই রকম বুরবকের মত বিশাল উচ্ছাস নিয়ে সিনেমা হলে ঢুকেছিলাম।

তারপর কি হল, সেটা বলতে আর মন চায় না। নিজের মুরগী হওয়ার গল্প বলতে কার ভালো লাগে বলুন। তবু মনে হল, বলা দরকার। সৃজিত যেভাবে তার চাটুকারদের ‘ভালো’ ‘দারুণ’ ‘সেরা’ ‘অভুতপূর্ব’ ইত্যাদি চাটনের তলে চাপা পড়ে যাচ্ছে, সেখানে আমার এই রিভিউটাও থাকা দরকার।

সাবধান, আমি কিন্তু গল্পের ৩০% আপনাকে এই রিভিউতে বলে দেব।

প্রথমেই বলি, বুদ্ধি বাইরে রেখে যদি সিনেমায় যেতে পারেন তবেই এই সিনেমা ভালো লাগবে। বুদ্ধি থাকলে আপনিও আমার মতই হতাশ হবেন।

শুরুতে ভালোগুলো বলে দিই –

১) মনোজ মিত্রের অভিনয় – ৩ মিনিটের দৃশ্যে মনোজ মিত্র জাস্ট কাঁপিয়ে দিয়েছেন

২) সারা-র অভিনয় – সত্যি নিজের চরিত্রে সারা যথাযথ। একেবারে ওভার রিয়াক্ট লাগে নি।

৩) অনির্বান ভট্টাচার্য্য – ভারিক্কি গলাটা খুব ভালো ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। বাংলার অন্যান্য অভিনেতাদের এনার কাছে উচ্চারণের ক্লাস নেওয়া উচিত।

৪) ক্যামেরা খুব উচ্চমানের নয়। কিছু কিছু শট একবারের বেশি ব্যবহার হয়েছে। অকারণে ড্রোনের ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। বাবুল সুপ্রিয়র বন্দুক তুলে ধরার দৃশ্যে ক্যামেরা ভালো হয়েছে। অনেকদিন মনে থাকবে।

৫) সম্পাদনা – মন্দের ভালো। সেরকম কিছু করার নেই। তবু অঞ্জন দত্ত যখন পুজোর প্লানিং করে, সেই জায়গাটা বেশ বুদ্ধি দিয়ে করা হয়েছে। পরিশ্রম করেছেন সেটা বোঝা যায়। অতীত দৃশ্য বোঝাতে, সাদাকালো ব্যবহার করতে হয় কেন ?? সৃজিতের দর্শক কি এখন এতটাই গর্দভ লেভেলে পৌঁছে গেছে যে অঞ্জন দত্তের অতীতকে সাদাকালো করতে হয়। প্লীজ ‘আসলে অন্য টোন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে’ এরকম বলবেন না। সত্তরের দশকে এ জিনিস চলত। এখন ফ্লাশব্যাকের দৃশ্যে একজন ভালো শর্টফিল্ম মেকারও সাদাকালো ব্যবহার করে না।

৬) লাইট – খুবই নিম্নমানের। এত খারাপ লাইট হয়েছে যে ভাবা যায় না। বিশেষ করে অঞ্জন দত্তের প্রথম দিককার দৃশ্য, যেখানে একা রাতে উঠে পায়চারী করছেন। বাগানে কাশ ফুলের গাছ দেখা ইত্যাদি দৃশ্যের লাইট একেবারেই খারাপ।

৭) অভিনয় – অঞ্জন দত্ত যদি নিজের অভিনয় থেকে ২০ শতাংশ মেলোড্রামা ঝেড়ে ফেলতে পারতো, ভালো হত। সম্প্রতি থিয়েটারে অভিনয় করেছেন কিছু, সেই স্টাইলটা এখনও গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন নি। সিনেমার অভিনয়ে এতটা লাউড ভালো লাগছিল না।

শ্রাবন্তী – হাতে কি আর কোনো সিনেমা নেই ?? আপনি এই সিনেমায় কি করছেন ?? কেনই বা আছেন ??

অম্বরীশ – দুটোর বেশি ডায়লগ নেই। ডায়লগ নেই মানলাম, সেটা খুব জরুরী নয়। কিন্তু আর কিই বা এমন আছে যার জন্যে অম্বরীশ এই সিনেমা করবে ??

সৃজিত – খুবই বাজে অভিনয়। ভীষণ ভীষণ বাজে। আপনার মুখের হাসি চোখে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছিল। অভিনয় করতে করতে হাসেন কেন ??

সায়ন্তিকা – বেশ ভালোই লেগেছে। এই ছবিতে শ্রাবন্তীর থেকে ভালো অভিনয় করেছে।

নীল – একই রকম।

অনির্বান এবং সারার কথা তো আগেই বলেছি।

৮) সংলাপ – খুবই ভালো। বুদ্ধিদীপ্ত। কিন্তু ঐ আর কি !! সৃজিতের সব চরিত্রই সৃজিতের মতই কথা বলে। চরিত্ররা কেউ নিজেদের মত কথা বলে না। গোবিন্দর সংলাপ যত ইন্টেলেকচুয়াল, ব্রহ্মানন্দর ডায়লগও সমান ইন্টেলেকচুয়াল।

আসুন এবার গল্পে প্রবেশ করি। অনেক কিছু বলার আছে। এক কাপ চা বা কফি নিয়ে বসতেই পারেন।

শুরুটা ঠিকঠাক। যীশু বিশাল টাকার মালিক। মেয়ে মারণ রোগে আক্রান্ত। তার শেষ ইচ্ছে দুর্গাপুজো দেখবে, সেটা পূর্ণ করতেই তাকে কলকাতায় আনার প্লান। যীশু নিজে কিছুদিন আগে এসে সবরকম প্লান করে যায়। তারপর কিছুদিন বাদে একেবারে পঞ্চমীর দিন কলকাতায় মেয়েকে নিয়ে ল্যান্ড করে। ব্যাস। এইখান থেকে গল্পের গরু ধীরে ধীরে গাছে উঠতে থেকে। ‘২দিন মানে ৭২ ঘন্টা’ (অঞ্জন দত্ত একজায়গায় এরকম একটা কিছু বলেছিল, প্লীজ যারা সিনেমা দেখতে যাবেন, তারা আমায় একটু কনফার্ম করে দেবেন যে অঞ্জন দত্ত কি সত্যি সত্যি ৭২ ঘন্টাই বলেছিল, যেহেতু সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি, ফলে রিভার্স করার সুযোগ ছিল না), অঞ্জন দত্তের যুক্তি ২দিনে যে কাজ করা অসম্ভব, ৭২ ঘন্টায় সেই কাজ অনায়াসে হয় যায়।

অঞ্জন দত্তের চরিত্র এই সিনেমা কিছু করে না, তিনি শুধু অভিনয় করেন। মানে, সারাক্ষণ আমার এইটা চাই। আমার ঐটা চাই। এই তার বায়না। এবং কি আশ্চর্য্য সেইটা হয়েও যাচ্ছে। দুদিনে কলকাতায় ১০টা থীম পুজো। সেটাও আবার অঞ্জন দত্ত নিজেই ঠিক করে দিচ্ছে। আমেরিকার ওটা, লন্ডনের সেটা, ব্যাঙ্ককের ব্যাটা ইত্যাদি। ইয়ার্কি হচ্ছে ??

শেষ দৃশ্যে, বাবুঘাটে ভাসান। কি দরকার বাপু ?? ঐ তো লেকটাউনের একটা মামুলি আবাসনের পুজো। সামনেই তো কত পৌরসভার পুকুর রয়েছে। যখন তোমার বাজেট নেই, তোমার গঙ্গায় হাওয়া খাওয়ার কি দরকার বাপু। অঞ্জন দত্ত তখন আপনার ঘাঁড় ধরে বলবে, বাজেট ফাজেট কোনো ব্যাপার নয়। ইচ্ছেটাই আসল। জোর করে ইমোশোন চাপিয়ে দেওয়াবেই আর কি !!

ধরুন পকেটে আপনার আধুলী পড়ে আছে, হঠাৎ আপনার রাজস্থানের গোধুলী দেখার ইচ্ছে হল, সেটা কি সম্ভব ?? মানে বাজেট ফাজেট কোনো ব্যাপার না, ইচ্ছেটাই আসল। সেই ইচ্ছের জোরে আপনি বিনা টিকিটে থর এক্সপ্রেসে উঠে পড়লেন। টিটির কাছে ধরাও খেলেন, কিন্তু টিটি আপনার ইচ্ছে কথা শুনে হেব্বী ইমোশনাল হয়ে আপনাকে তার নিজের সীটে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাজস্থানে চলল। একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন, টিটি যদিও আপনার কথা শোনে, রাজস্থানের উট কিন্তু আপনার কথা শুনবে না। তারা কাঁটা বাছিয়াই পাতা চিবাইবে।

বহুত ঘ্যানোর ঘ্যান হল। এবার কিছু জিনিস পয়েন্ট করে করে বলে দিই। সৃজিত ভক্তদের সুবিধা হবে।

১) প্রথমে যীশু কলকাতায় আসে এবং সিনেমাওয়ালাদের ভাড়া করে কারণ সারা শহরে নকল দুর্গাপুজো করতে হবে। কিন্তু আদতে তারা কি করে ?? তারা শুধু এয়ারপোর্ট থেকে লেকটাউন অবধি রাস্তাটা এবং লেকটাউনের একটা আবাসনকে দুর্গাপুজোর মত করে সাজায়। ব্যাস। এতটা হলে সিনেমায় কোনো সেরকম বড় মাপের ভুল হচ্ছিল না। এরপর হঠাৎ মেয়ে বায়না করে সে কলকাতার সব বড় বড় থীম পুজো দেখবে। ব্যাস, দু-দিনে কলকাতায় ৮/১০ খানা থীম পুজো রেডি।

যারা প্যান্ডেল বানায়, তারা এবার হাসছে। আপনি যত হাজার লোকই লাগিয়ে দিন না কেন, একটা থার্মোকলে আঠা দিয়ে কাঠের গুঁড়ো লাগিয়ে সেটা শুকাতেও তো দু-বেলা সময় লাগে। একটা কাপড়ে রঙ ধরতেও কত সময় লাগতে পারে সেই ধারণা আপনাদের আছে ??

তাও মানতাম যদি রাস্তার ধারের একটা দুটো প্যান্ডেল হত, এতো একেবারে দেশপ্রিয় পার্ক, মহম্মদ আলি পার্ক, মুদিয়ালী ইত্যাদি আরো। গল্পের গরু গাছে নয়, মহাকাশে চড়ে গেছে।

আপনি পুজো দেখতে রাস্তা দিয়ে যাবেন, কিন্তু সেখানে কোনো হোর্ডিং চোখে পড়বে না। খেয়াল রাখবেন, নতুন এই পুজোগুলো কিন্তু পরে প্লানিং হয়েছে, তাই আগে যে হোর্ডিং লাগানো হয়েছে সেটা এয়ারপোর্ট থেকে লেকটাউন অবধি। সেন্ট্রাল বা কালিঘাটের কোনো রাস্তায় কোনো পুজোর হোর্ডিং নেই। লাইটিং নেই। দোকানপাট নেই।

তাই, দু-দিনে শুধু পুজোর প্যান্ডেল নয়, এই সমস্ত কিছু ম্যানেজ করতে হয়েছে। মহম্মদ আলী পার্কে যে মেলাটা হয়, সেটাও অবধি দু-দিনে অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে। আচ্ছা মেলা কিভাবে হয় সেটা সৃজিত বাবুরা জানেন ?? একটা ভ্রামমাণ মেলা বা প্রফেশনাল মেলা সারা বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মেলা দেখায়। মহম্মদ আলী পার্কে যারা মেলা বানালো, তারা সেসময় নিশ্চয় অন্য কোথাও মেলা নিয়ে বসেছিল, তাদের সেখান থেকে তুলে আনা হয়েছে বোধহয়। ও আচ্ছা, এবার বুঝেছি, এটা অন্য কোনো মেলার গ্রুপ। যারা সেসময় বেকার বসেছিল। ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। নাগোরদোলা ঘোড়ার গাড়ি সব ফিটিং ফাটিং করাই ছিল। জাস্ট দুটো ফুঃ দিয়ে মন্ত্র পড়ে এখানে পুঁতে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সুপার স্পেশালিটি হসপিটালগুলির মত। বিল্ডিং আছে, কিন্তু ভিতরে যন্ত্রপাতি নাই।

কলকাতায় নকল দুর্গাপুজো না দেখিয়ে, সৃজিত বাবু, আপনার উচিত ছিল শ্রীরামপুরের রথযাত্রা দেখানো। তাহলে গল্পটা আরো সঠিক হত। ইমোশনে বাঁধা আসতো না। কিন্তু চমকের চক্করে পড়ে এত ভালো সাবজেক্টটাকে গণ-ধর্ষণ করলেন সকলে মিলে।

২) উমা কলকাতার দুর্গাপুজো সম্পর্কে সমস্ত কিছু ডিটেলে জানে। বিদেশে স্কুলে সে এই নিয়ে দারুণ একখানা লেকচার দেয়, যেটা সৃজিত কায়দা করে না দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে, কিন্তু এটা তো বোঝাই যাচ্ছে উমা কলকাতার দুর্গাপুজো সম্পর্কে সবকিছু জানে। পুজোর সময় তাই কলকাতার মেট্রোতে কি পরিমাণ ভীড় হয় অথবা দুপুর বারোটার পর নবমীর দিন দেশপ্রিয় পার্কে কি পরিমাণ ভীড় হয় সেটা কি উমা জানে না ?? উমার বয়স যদি এখানে ৬ কি ৭ বছর দেখাতেন তাও মেনে নিতাম। কিন্তু এ তো একটা বিরাট সমঝদার মেয়ে, বয়স প্রায় ১৪ বছর।

৩) খবরের কাগজের হেডলাইন হচ্ছে ‘আজ মহাষষ্ঠী’!! ইয়ার্কি হচ্ছে ?? কাগজের কোনো বিজ্ঞাপনেও আজ ১৮৪ তম স্বাধীনতার বদলে ১৮৫ তম লিখে ফেললে শহরে তুলকালাম বেঁধে যায়, সেখানে কাগজের হেডলাইন হচ্ছে ‘আজ মহাষষ্ঠী’।

টিভিতে কারেন্ট কোনো খবর দেখানো হচ্ছে না। সারা লেকটাউন দমদম এলাকা জুড়ে শুধু পুজোর অনুষ্ঠান দেখানো হচ্ছে আর পাড়ার পলিটিকাল কাকুরা মুখ-বুজে রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের কোনো খবর নেই কেন ?? দিলীপ ঘোষ পুলিশকে হুমকি দিচ্ছে, অভিষেক ব্যানার্জী র‍্যালি করছে সেসব নিউজ কোথায় ?? সারাদিন শুধু ভাটের অষ্টমী নবমী। পুরোনো প্রোগ্রাম দেখানোর সময় কি সেখানে বছরের, তারিখের উল্লেখ থাকছে না ?? সেটাও কি এই উমা দেবীর জন্যে এডিট হয়ে যাচ্ছে ?? নিউজ চ্যানেলে আর কোনো কাজ নেই নাকি !!

৪) বৃষ্টির দৃশ্য । জানলার নীচ থেকে জল উপরের দিকে উঠছে – আপনি কখনও জানলা থেকে দেখেছেন বৃষ্টির সময় জল নীচ থেকে উপরের দিকে উঠছে ?? জলের পাইপ নিয়ে ছাদে উঠে সেখান থেকে থ্রো করা উচিত ছিল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, জানলার সামনে দিয়ে জল উপরের দিকে উঠছে। অন্তত এডিটে ঐ শটগুলো বাতিল করা উচিত ছিল।

৫) প্রথমে দেখানো হচ্ছে, কাজের চাপে যীশু এত মগ্ন যে বউ-বাচ্চাকে সময় দিতে পারে না। তাই তার ডিভোর্স হয়। পরে সেসব বেমালুম চেপে দেখানো হচ্ছে, আসলে যীশুর বউ সায়ন্তিকা একজন দুশ্চরিত্রা, সে তার মেয়েকে ভালোবাসা দেয় নি, অন্য একজনের সাথে প্রেম করে নিজের মেয়েকে ফেলে পালিয়ে গেছে। কখনও চোখের জল ফেলে নি। সত্যি ?? সৃজিত আপনি একসাথে অনেক কাজ করছেন, তাই নিজের সিনেমার প্রথম দশ মিনিটে কি করেছেন সেটা সিনেমার শেষে এসে স্ক্রীপ্টে ভুলে মেরেছেন। দেখুন যীশুর নিষ্ঠুরতায় সায়ন্তিকা সারাদিন কেমন ভেউ ভেউ করে কেঁদেছে এই সিনেমায়। শেষে এসে তাকে পাপনি ভিলেন বানিয়ে দিলেন ???

৬) একটা ঘুষি খেয়ে যে লোক দশ বছর ধরে রাগ পুষে রেখে একজনকে চরম অপমান করে, আরও একটা ঘুষি খেয়ে সে লোক একেবারে গলে জল ?? সৃজিত যে দৃশ্যে নিজে অভিনয় করেছে। লোকটা শয়তান, নিষ্ঠুর। একটা ঘুষির বদলা সে দশ বছর পরেও সমান আক্রোশে নিতে ছাড়ে না। পরের ঘুষির বদলা সে দশ মিনিটেই ভুলে যায়। বাহ রে দুনিয়া !!! কি এমন হল সেটা একটু ব্যাখ্যা করবেন প্লীজ।

ধরে নিলাম, মানুষের মন, রঙ পালটায়। কিন্তু যদি সৃজিতের মন না বদলাতো তাহলে কি হত। এত টাকা খরচ করে এত প্লানিং করে এত ব্যবস্থা তো প্রথম বলেই আউট হয়ে যেত। এই এত জরুরী একটা বিষয় সেটা কি না একেবারে প্রাক মুহুর্তে ডিসাইড হচ্ছে ???

৭) শেষ দৃশ্যে জুনিয়র আর্টিস্ট সাপ্লায়ার গায়েব হয়ে গেল !! কারণ সে নিজের কাজে ফেইল মারলো। তাই হাতে দু-ঘন্টা সময়ে অঞ্জন দত্ত নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে লোককে রাজী করিয়ে, নিজে আবার বাবুঘাটে পৌঁছেও গেল !! ব্যস্ত শহরে (ছবিতেই দেখা যাচ্ছে) টালিগঞ্জ থেকে বাবুঘাট যেতে কত সময় লাগতে পারে আন্দাজ আছে এখানে কারো ??

৮) নকল মা ?? আবার একটা ইয়ার্কি !! বাচ্চা নিজের মায়ের নাম জানে। সারাদিন ফেসবুক ইউটিউব করছে। মা-কে বা মায়ের রিসেন্ট ছবি খুঁজে পাওয়া কি খুব কঠিন ?? বরং ভেবে নিই, সায়ন্তিকা ফেসবুক করে না। অথবা প্রোফাইলে নিজের ছবি দেয় নি, যদি কেউ চুরি করে সেই ছবি কোনো পর্ণ সাইটে দিয়ে দেয়, সেই কারণে। ফলে তার মেয়ে মায়ের ফটো খুঁজে পায় নি।

এটা সেরা

সিনেমা দেখতে দেখতে মাঝেই মাঝেই মনে হচ্ছিল এই বুঝি কোনো দৃশ্যে হাত নাড়তে নাড়তে মমতা ব্যানার্জী স্ক্রীনে না ঢুকে যায়, হয়ত উমার মাথায় স্নেহের হাত রেখে কিছু সরকারী ভাতা ঘোষণা করে দিল। দিতেই পারতো। সৃজিতের সিনেমা তো। যেখানে যুক্তি ফুক্তি ভাঁড় মে যায়ে, চমক থাকা আবশ্যক।

এসব পড়ার পর সৃজিত ভক্তরা যে প্রশ্ন গুলো করতে পারে সেইগুলির উত্তর আগাম দিয়ে রাখছি।

‘আগে সৃজিতের মত একটা সিনেমা করে দেখান’

উত্তর – প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে গেলে কি এবার প্রধানমন্ত্রী হতে হবে ?? অথবা তেলের দাম কেন বাড়ছে এই প্রশ্ন করতে গেলে কি আগে অর্থমন্ত্রী হতে হবে ??

সৃজিত রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছে। আপনি কোথাকার হরিদাস ??

উত্তরে বলি এক ম্যাচে সেঞ্চুরী করেছে বলে কি কাউকে সারা জীবন টীমে রেখে দিতে হবে ?? পরপর সব খেলায় জিরো করলেও তাকে তোল্লা মারতে হবে কারণ সে কবে একবার সেঞ্চুরী করেছিল !! বাংলায় একটা প্রবাদ হয়েছে, কবে ঘি খেয়েছিলে এখনও তার গন্ধ শুঁকছে।

সিনেমায় লজিকের আবার কি দরকার ?? এটা তো এন্টারটেইনমেন্ট

ঠিকই তো, সত্যজিত রায়, মৃণান সেন, ঋত্বিক ঘটকেরা তো সকলে সিনেমা করতে এসে ‘বাল’ ছিঁড়েছিল, সৃজিতই একমাত্র সিনেমা মেকার। বাহ !! দাদা, লজিক না থাকলে শোলে সিনেমায় ঠাকুর নিজেই একা ঘোড়া ছুটিয়ে গব্বর সিং-কে দলবল সমেত পাকড়াও করে ফেলতে পারতো, তার কি দরকার ছিল ভাড়া করে জয়-ভীরুকে নিয়ে আসার।

লজিকের যখন গাঁড় মারবো বলে ভেবেই রেখেছি, তখন যিশু নিজেই দায়িত্ব নিয়ে কলকাতায় নকল দুর্গা পুজো করতে পারতো, অত ঝামেলা করে সিনেমাওয়ালাদের নিয়ে আসার কি দরকার ছিল ??

এবার আপনি বলবেন, না মানে ঐটুকু লজিক তো দরকারই। হাসালেন দিদি।

সৃজিত আপনাকে বলছি

সৃজিত আমি আপনার ছবির কাঁটাছেড়া করছি বলে ভাববেন না, যে আমি আপনার হেটার। আপনার সিনেমাকে ভালোবাসি। আপনার সিনেমা দেখে আশা জেগেছিল বুকে, হয়ত আমরা ভালো ভালো দারুণ কিছু সিনেমা আপনার হাত ধরে দেখতে পারবো। আপনি বিষয় নির্বাচনে চমৎকার, কিন্তু ঐ হিট এবং শেষ দৃশ্যে দর্শককে চমক দেওয়ার চক্করে পরে পুরো সিনেমার মা – মাসী করে ছাঁড়ছেন । প্লীজ, কিছুদিনের জন্য ছুটি নিন। একটু আমেরিকা লন্ডন করে আসুন। পারলে একা একা যান। জয়া, ঋতাভরী ইত্যাদিদের ছাড়ুন। সিনেমাটাকে ধরুণ। নইলে স্বীকার করে নিন, আপনিও আসলে একটা রাজ চক্রবর্তী ছাড়া আর কিছুই না। রাজ চক্রবর্তী তবু অনেষ্ট, সে যেটা করে, সেটা সকলকে জানিয়েই করে। আপনি অনেকদিন হল এই ‘শিক্ষিত’ সিনেমার লেবেলটা নিজের গায়ে চাপিয়ে ঘুরছেন। এবার এই লেবেলটা মুছে যাচ্ছে। বেরিয়ে যাচ্ছে আসল চেহারা, আপনি আসলে একটা হিট মেশিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *